৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে (এএসপি) মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মো. আনোয়ারুল কবির মিটুল। ২০২১ সালে ৪০তম বিসিএসে অংশ নিয়ে সফল হয়েছেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই মেধাবী শিক্ষার্থী। পিতা ও বড় ভাইয়ের প্রচেষ্টায় এখন পুলিশ ক্যাডার মিটুল।
মিটুল ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ফলসী গ্রামের বাসিন্দা, হরিণাকুন্ডু প্রিয়নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম ও নুরুন্নাহার বেগমের ছোট ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারুল কবির মিটুল তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট। তিনি হরিণাকুন্ডু উপজেলার প্রিয়নাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে এসএসসি পরীক্ষা গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেন। এরপর ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ২০০৯ সালে কৃতিত্বের সাথে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাশ করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ হতে গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তার বড়ভাই খাইরুল ইসলাম যশোরের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কর্মরত।
মিটুলের পিতা সাবেক শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, শিক্ষক জীবনে তিনি অনেক ছাত্রকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। হাতেগড়া বেশ কয়েকজন ছাত্র আজ দেশের বড় বড় ক্যাডার অফিসার। সেই জায়গা থেকে তিনিও চেয়েছিলেন নিজের সন্তানদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে। তাই বড় ছেলেকে বিচারক (জজ), মেজ ছেলে কোর্টের পেশকার এবং ছোট ছেলেকে পুলিশ ক্যাডার হিসেবে পেয়েছেন। তিনি চান তার তিন সন্তান সমাজ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। সফল পিতা হিসেবেই নিজেকে তুলে ধরেন তিনি।
মিটুলের বড় ভাই যশোরের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ খাইরুল ইসলাম জানান, তার ছোট ভাই যখন এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলা সেরা রেজাল্ট করে, তখন পিতার থেকে ছোট ভাইকে চেয়েনিয়েছিলেন ভালো কোনো কলেজে পড়াবেন বলে। তাদের পিতা রাজি হলে ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তি করে দেন।
সেখান থেকে জিপিএ-৫ পাবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করেন। সেখান থেকেই গ্রাজুয়েশন শেষ করে প্রথম ২০১৫ সালে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আগ্রহ যুগান। এরপর ২য় বার বিসিএস দিয়েও ফল ভালো না হওয়ায় ছোট ভায়ের মনবল বাড়াতে অনেক চেষ্টা করেন তিনি।
৩য় বার ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় ভালো রেজেল্ট করে। মৌখিক পরীক্ষার পর গত ৩০ মার্চ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) থেকে ঘোষিত ফলাফলে তাকে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। ছোট ভাই পুলিশ ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ পাওয়ায় নিজের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করা মো. আনোয়ারুল কবির মিটুল বলেন, আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও বড় ভাই বিচারক। তারা আমাকে অনুপ্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছেন। পরিবারের অভিভাবকদের অনুপ্রেরণায় ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি সুযোগ পেলেই বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছি।
মিটুল জানান, ২০১৫ সালে ৩৬তম বিসিএস-এ প্রথম প্রস্তুতি মূলক অংশ গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৭ সলে ৩৮তম বিসিএস দেন, সেখানেও পরীক্ষায় ভালো করতে পারেননি। হাল না ছেড়ে আবারো ২০২১ সালে ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, এবার ভালো একটা রেজাল্ট হয়। তিনি বুঝতে পারেন স্বপ্নের সোনার হরিণ বাস্তবে পেতে চলেছেন।
এরপর সকল পরীক্ষা শেষ করে ২৪ জানুয়ারী মৌখিক পরীক্ষা হয়। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর ফলাফল প্রকাশ করে পিএসসি। বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে তিনি সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন। সবশেষ বাবা ও বড় ভাইয়ের মুখ উজ্জল করতে পেরেছেন তিনি। এখন একজন মানবিক পুলিশ হিসেবে সততার সাথে দেশের মানুষের সেবা করতে চাই। এজন্য সকলের দোয়া প্রার্থী।