ক্রীড়া প্রতিবেদক :
সময় লাগল নিজেকে খুঁজে পেতে। অস্ট্রেলিয়ার হাই-লাইন ডিফেন্ডিংয়ে প্রথম দিকে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন লিওনেল মেসি। সেখান থেকে দলকে পথে ফেরাতে আবারও জাদু দেখালেন এই তারকা। তার ম্যাজিকে লিড পেল আর্জেন্টিনা। একক প্রচেষ্টায় তিন ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে গোল করলেন। এটি মেসির ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে হাজারতম ম্যাচে ৭৮৯তম গোল। যে গোলে বিশ্বকাপে মেসি ছাড়িয়ে গেলেন ডিয়াগো ম্যারাডোনাকেও। আল রাইয়ানের আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে মেসির পর গোল করলেন হুলিয়ান আলভারেজ। শেষ দিকে আত্মঘাতী গোলে শুধু ব্যবধানই কমিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শেষ মুহূর্তে আর্জেন্টিনাকে বাঁচিয়েছেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
এই গোলরক্ষকের দক্ষতায় নির্ধারিত সময়েই অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে শেষ আটের টিকেট কাটলো আর্জেন্টিনা। আগামী ৯ই ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা।
উরুর চোটের কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একাদশ ছিলেন না আনহেল ডি মারিয়া। তার পরিবর্তে দলে সুযোগ পেয়েছেন সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথম একাদশে থাকা পাপু গোমেজ। ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনাকে ভয় না পাওয়ার কথা বলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কোচ গ্রাহাম আরনল্ড। ম্যাচ শুরুতেও ছিল সেই ছাপ। পোল্যান্ডের মতো নিচে নেমে না এসে মাঠে নিজেদের পজিশন ধরে রেখেই খেলা শুরু করে তারা।
আর্জেন্টিনার পাসের পর পাস দিয়ে চেষ্টা করছিল জায়গা বের করে আক্রমণে যেতে। তবে মনোযোগ ধরে রেখে অস্ট্রেলিয়া খুব বেশি সুযোগ দিচ্ছিল না আর্জেন্টাইনদের। শুধু লিওনেল মেসিদের ঠেকিয়ে রাখায় নয়, আক্রমণেও চোখ ছিল তাদের। কয়েকবার আক্রমণে গিয়ে আর্জেন্টানই রক্ষণের পরীক্ষাও নিয়েছিল তারা। আর অস্ট্রেলিয়ার কৌশলের কারণে আর্জেন্টিনা চাইলেও অলআউট আক্রমণে যেতে পারছিল না।
ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিটে ৬১ শতাংশ বলের দখল রাখলেও, একটি বেশি শট নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। সেই শটটিও অবশ্য লক্ষ্যে ছিল না। ম্যাচে প্রথম কর্নার পায় অস্ট্রেলিয়া। তবে ২৩তম মিনিটে ওই কর্নানের ফায়দা তুলে নিতে পারেনি তারা। ২৮তম মিনিটে সকারুদের দ্বিতীয় কর্নারটিও ব্যর্থ হয়। প্রথমার্ধে নিজের ছায়া হয়েই থেকেছেন লিওনেল মেসি। ৪-৪-২ ফরমেশনে খেলা অস্ট্রেলিয়ার চারজন কখনই বক্সের খুব একটা উপরে উঠেনি। উইং এবং মিড দুই দিক থেকেই আক্রমণে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করছিলেন মেসিরা। তবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাক লাইনে চিড় ধরাতে পারছিল না তারা। শেষ পর্যন্ত ৩৫ মিনিটে মেসিকে এগিয়ে এসেই ভাঙতে হলো অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্স। ফ্রি-কিক থেকে তার প্রচেষ্টা অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক ফিরিয়ে দিলেও, সেই আক্রমণেই ডিবক্সে ভেতর থেকে দারুণ এক মাটি কামড়ানো শটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এটি বিশ^কাপের নকআউট পর্বে মেসির প্রথম গোল।
এর আগে বিশ্বকাপে ৮ গোলের সবকটিই ছিল গ্রুপপর্বে। তবে নকআউটে ৪টি গোলে সহায়তা করেছিলেন মেসি। গতকাল নকআউট পর্বে প্রথম গোলের সুবাদে কয়েকটি রেকর্ডে নাম লেখিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন তারকা। বিশ^কাপে ছাড়িয়ে গেছেন দিয়েগো ম্যারাডোনাকে। বিশ^কাপে ম্যারাডোনার গোল আটটি, মেসির নয়টি। ১০ গোল নিয়ে এখন মেসির সামনে শুধু গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা।
দ্বিতীয়ার্ধে খোলস থেকে বেরিয়ে আসে আর্জেন্টিনা। অস্ট্রেলিয়াও গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে খেলতে থাকায় সুযোগ বাড়ে আর্জেন্টিনার। ম্যাচের ৫৭ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার গোলরক্ষক ম্যাট রায়ানের ভুলে হুলিয়ান আলভারেজ লিড বাড়ান আর্জেন্টিনার। তবে শেষ দিকে আর্জেন্টিনাকে চেপে ধরে সকারুরা। ৭৭তম মিনিটে ক্রেইগ গুডউইনের শট এনজো ফার্নান্দেজের মুখে লেগে দিক পরিবর্তন করে ঢুকে যায় আর্জেন্টিনার জালে। ৮২তম মিনিটে সমতাসূচক গোলটি প্রায় পেয়েই গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ মুহূর্তে আজিজ বেহিকের শট কোনোমতে ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনাকে রক্ষা করেন বদলি খেলোয়াড় লিসান্দ্রো মার্টিনেজ।
ম্যাচের ৮৯তম মিনিটে মেসির বাড়ানো বলে লাওতারো মার্টিনেজ ফাঁকায় পেয়েও বাইরে মারেন। যোগকরা সময়েও প্রায় একই রকম মেসির পাস নষ্ট করেন এই ফরোয়ার্ড। বাকি সময়ে মেসি চেষ্টা করেছেন ব্যবধান বাড়াতে। তবে শেষ দিকে ভাগ্য সহায়তা না করায় গোল পাননি এই ফুটবল জাদুকর। রেফারির শেষ বাঁশি বাজানোর আগমুহূর্তে আর্জেন্টিনাকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক মার্টিনেজ। ওয়ান টু ওয়ানে ম্যাকলানের শট অসাধারণ দক্ষতায় রক্ষা করে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে তোলেন মার্টিনেজ।