নোয়াখালী প্রতিনিধি :
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ২৮টি দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো প্রায় ১০টি দোকান। এতে আনুমানিক ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
মঙ্গলবার(২৯ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট ২ ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা যায়, জয়াগ বাজারের একটি খাবারের হোটেলের গ্যাসের চুলা জ্বালাতে গেলে হটাৎ আগুন দোকানের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী প্রথম আগুন নেভানোর চেষ্টাকরে ব্যর্থ হয়। পরে হোটেলের সাথে লাগোয়া হারুনুর রশিদের গোডাউনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কিছু সময় পরে গোডাউনে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয় ও আগুন চারপাশের দোকানগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে বাজারের খাবারের হোটেল, কাপড়ের দোকান, কসমেটিকসের দোকান, রড-সিমেন্ট, ইলেক্ট্রনিকস পণ্যের দোকান, মুদি দোকান, গোডাউন সহ প্রায় ২৮টি দোকান ছাই হয়ে যায়।

গোডাউনের মালিক হারুনুর রশিদ জানান, এই বাজারে সবচেয়ে বড় গোডাউন ছিলো তার। লেলিহান আগুনে তার গোডাউন সহ আরো একটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তার সব শেষ হয়ে গেছে।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাজারের অন্যতম ব্যবসায়ী রবিন ট্রেডার্সের মালিক নুরুল হুদা। রড-সিমেন্টের ব্যবসা করেন তিনি। বর্ণনা দিচ্ছিলেন কিভাবে তার চোখের সামনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কয়েক লক্ষ টাকার মালামাল ভস্মীভূত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ফজরের আগমুহূর্তে বিভিন্ন মসজিদের মাইকে বাজারে আগুন লাগার ঘোষণা শুনতে পাই। ছুটে এসে দেখি বাজারের কয়েকটি দোকানে আগুন লেগেছে। কিছু সময় পরে একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। মুহুর্তের মধ্যে আগুন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিলো যে দোকানে কোন মালামাল রক্ষা করতে পারিনাই।

জয়াগ ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ হারুনুর রশীদ বাজারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের তালিকা করছিলেন। তার সাথে কথা হলে অভিযোগের স্বরে জানান, অগ্নিকান্ডের খবর জানানোর পরেও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করেছে। বাজারে পৌঁছানোর পরে ফায়ারসার্ভিস তাদের যান্ত্রিকত্রুটির কারণে কাজ শুরু করতে দেরি করে। গাফেলতির কারণেই আগুন আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে জানতে জয়াগ বাজারের আহবায়ক ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত আকবর পলাশ জানান, গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ও অপরিকল্পিত দোকানপাটের কারনে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ২৮টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০টি দোকান। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩কোটি টাকার মতো হতে পারে। এটি জয়াগ বাজারের স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সরকার ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এসময় অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের বিষয়টি তুলে ধরে সৈকত আকবর বলেন, বাজারে মুদি দোকান থেকে শুরু করে চা-পান বিক্রেতারাও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করেন। অনেকে গুদামে সিলিন্ডার রেখে নিয়মনীতি না মেনেই ব্যবসা করছেন। এছাড়া অপরিকল্পিত ভাবে বাজারে দোকান তৈরী করায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুন নেভাতে কষ্ট হয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার মজুত ও ব্যবসায়ের আইন যারা মানছেনা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
সোনাইমুড়ী ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মোঃ রাকিবুল ইসলাম বলেন, হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূচনা হয়েছে। আগুন লাগার খবর শুনে দ্রুত সোনাইমুড়ী, চাটখীল ও বেগমগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুর করে। কাজ শুরুর পরে একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। প্রায় ২ ঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই জানানো যাচ্ছেনা। তদন্ত করলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে।