নোয়াখালী প্রতিনিধি :
নোয়াখালী সোনাইমুড়ী খাদ্য গুদাম এখন কবিরাজের আস্তানা। সকাল-সন্ধ্যা চলে ঝাড়ফুঁক,পানিপড়া,গুণ-তাবিজ। দূর-দূরান্ত থেকে সমস্যগ্রস্থ সাধারণ মানুষ এসে পড়ছেন প্রতারণার ফাঁদে। আর এই কবিরাজি ফাঁদ পেতে বসেছেন খোদ খাদ্য গুদামের প্রহরী। খাতা-কলমে নাম সামসুল আলম হলেও বেশি পরিচিত সামসু হুজুর নামে। ১৯ তম গ্রেডের প্রহরী হয়ে বসবাস করছেন গুদামের সাব ইন্সপেক্টরের জন্য বরাদ্দকৃত ফ্লাটে। সেখানেই তার কবিরাজি আস্তানা। সব জেনেও চুপচাপ খাদ্য গুদামের নিয়ন্ত্রক।
খাদ্য গুদাম একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ সরকারী প্রতিষ্ঠান। গোপনীয়তা ও খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে গুদাম এলাকা সরকারি ভাবে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। বিনানুমতিতে প্রবেশে জেল-জরিমানার বিধানও রয়েছে। তবে এসকল বিধানের তোয়াক্কা না করেই ঝাড়-ফুঁক নিতে গুদাম এলাকায় অবাধে চলে সাধারন মানুষকে যাতায়াত।

সরেজমিনে গুদাম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গুদামের প্রহরী সামসুল আলমের বাসার সামনে ক্রিকেট খেলছেন উঠতি বয়সী কিছু যুবক। সামসু হুজুরের কথা জিজ্ঞাসা করতেই তারা দেখিয়ে দিলো গুদামের সাব ইন্সপেক্টর ইমরান হাসানের বাসা। সেই বাসাতেই গিয়ে দেখা মিললো প্রহরী সামসুল আলমের। প্রথম দেখাতে সাধারন রোগী মনে করে প্রতিবেদককে ঝাড়-ফুকের ঘরে নিয়ে গেলেন সামসুল। সেখানে গিয়ে দেয়া যায় তিনজন মহিলা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিতে এসেছেন সামসু হুজুরের কাছে। সমস্যা শোনার জন্য জনপ্রতি নেওয়া হয়েছে পাঁচশত টাকা। আর সমস্যার সমাধানের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রেট।
চিকিৎসা নিতে আসা এক মহিলার সাথে কথা হলে তিনি জানান, পাল্লাবাজার এলাকা থেকে এসেছেন। পারিবারিক সমস্যার সমাধানের জন্য। কবিরাজ বলেছেন শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে তাবিজ করেছে। সমাধানের জন্য খরচ লাগবে ১৫ হাজার টাকা।
পাশের আরেকজন মহিলার সাথেও কথা হয়। তিনিও জানান পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এসেছেন। শুনেছেন সর্বরোগের, সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারেন। নাম লেখাতে দিয়েছেন ৫০০টাকা। সমস্যার বিষয়ে কথা বলেছেন কবিরাজের সাথে। সমাধানে লাগবে ১৩ হাজার টাকা।

গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দিয়ে অনিয়মের বিষয়ে কথা শুরু হয় সামসুল হকের সাথে। ২০১২ সাল থেকে চাকরি করছেন খাদ্য গুদামের নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে। সোনাইমুড়ীর আমিশাপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তিনি। প্রহরী হয়ে কিভাবে বসবাস করছেন গুদামের সাব ইন্সপেক্টরের জন্য বরাদ্দকৃত ফ্লাটে এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। কিভাবে নিয়মবহির্ভূতভাবে সংরক্ষিত এলাকায় সাধারণ মানুষের কবিরাজি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, মানুষের সেবা দিচ্ছেন। তবে সেবার নামে কি কারণে মোটা টাকা নিচ্ছেন, আর কিভাবে রোগ শনাক্ত করছেন এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান কবিরাজ। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত নারীদের টাকা ফেরত দিয়ে পরে নানা ভাবে প্রতিবেদকে উৎকোচ প্রদানের চেষ্টা করেন।
গুদামের চারপাশে সিসি ক্যামেরা থাকলেও গুদাম এলাকার ভেতর দীর্ঘদিন এমন কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি গুদাম নিয়ন্ত্রকের? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় সোনাইমুড়ী খাদ্য গুদামের কর্মকর্তার সাথে। সোনাইমুড়ী খাদ্য গুদামের নিয়ন্ত্রক ইমরানুল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এটা সামসুল হকের ব্যক্তিগত বিষয় এই বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। কিন্তু বহিরাগতদের প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে সামসুল হকের সাফাই গেয়ে তিনি বলেন, “এতে নিরাপত্তার কোন সমস্যা হবে না।”